autopass-autopass

অটোপাশ অটোপাশ | মুহম্মদ রিফাত তানভীর

অটোপাশ ব্যাচ হওয়ার সুবিধার্থে(অথবা অসুবিধার্থে) বইয়ের সাথে প্রায় দুবছর সাথে কোন যোগাযোগ নেই,হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে তো বই হাতে নিই,তবে পড়তে না,ধুলো ঝাড়তে! এভাবে যখন বছর প্রায় শেষের দিকে তখন বিদায়ী ঘন্টার আগের শোনা গেল যে বারো তারিখ থেকেই স্কুলের ঘন্টা বাজানো হবে ।জানিনা অন্যদের কী অবস্থা, কিন্তু আমার নিজের কেন জানি মনে হচ্ছিল এটা কোন সুসংবাদ তো নয়ই,আরো যেন কোন বিভীষিকা! যদিও মস্তিকের একটা পিচ্চি অংশ থেকে সিগন্যাল দিচ্ছিল যে স্কুল খুললেই ভালো,কে বা এতদিন বাসায় বসে কাটাতে চায়!অগত্যা, ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিতে থাকলাম,উনিশমাসের দীর্ঘ ছুটি শেষে আবার সেই পুরনো ক্যাম্পাসে পদার্পণ!

এতদিন পর মনেই পড়ছিল না যে আমাদের স্কুলে টাই আছে কিনা!স্কুল না থাকাতে তো অভ্যাস হয়ে গেছে সারাদিন শুয়ে থাকার,সুখনিদ্রায় শায়িত থাকতে থাকতে চালচলনও অনেকটা শ্লথগতির হয়ে গিয়েছে,প্রথমদিন ক্লাসে গিয়ে তারই প্রতিফলন সচক্ষে টের পেলুম!প্রথম ক্লাস হলো জীববিজ্ঞান, ম্যাডাম তো ক্লাসে এসে বই হাতে নিয়ে এমন একটা ভাব করলেন যে স্পষ্ট বুঝলাম তাঁর অবস্থাও আমাদের মতোই,তিনিও এই প্রথম বইটা খুলেছেন এই বছরে!শেষে পড়ানো শুরু হলো তৃতীয় অধ্যায়, নাম সম্ভবত কোষ বিভাজন,ম্যাডাম একেক করে পড়াচ্ছেন মাইটোসিস,অ্যানাফেজ টেলোফেজ আর আমি হাই তুলে ততক্ষণে ঘুমের ঘোরে চলে গেছি,পাশের জন সময়মতো ডেকে না তুললে অবশ্য ম্যাডাম ই সেই কাজটা করত! আমি যদিও একজন ফার্স্টে বসা ব্যাকবেঞ্চার,কিন্তু যারা প্রকৃত ব্যাকবেঞ্চার ই,তারা এই করোনার সুযোগটা ভালোভাবেই লুফে নিচ্ছিল!মাস্কের আড়ালে কথা বলে সিয়াম,আর দাঁড় করায় মাহিরকে!এ যেন এক লুকোচুরি খেলা শুরু হয়ে গেছে ক্লাসে ।

দ্বিতীয় ক্লাসে এলেন ধর্মের শিক্ষক, ততক্ষণে আমার ঘুম কেটে গেছে,আর অবচেতন মনে শোনা সেই মাইটোসিস,মিয়োসিস তখনও মাথার চারপাশে বনবন করছে।স্যার পড়াতে পড়াতে বলছেন,”আমরা এই পৃথিবীতে কেন এলাম?”(উত্তর বোধহয় মিয়োসিস কোষ বিভাজন) “আমাদের এই পৃথিবীতে আসার মূল উদ্দেশ্য কী?”যাইহোক, সবমিলিয়ে প্রথম দিনটা ভালো ছিল,বহুদিন পর সবার সাথে পুনর্মিলন!দ্বিতীয় দিন যেদিন ক্লাসে গেলাম, সেদিনের অবস্থাও কম ভয়াবহ না,সকালবেলা রসায়নের হাইড্রোজেন হিলিয়াম পড়ে গিয়েছি স্কুলে,রুটিন তো জানতাম না,দেখি প্রথমেই শুরু হলো পদার্থবিজ্ঞান! বাসায় পড়ে এলাম H তে হাইড্রোজেন, স্যার পড়িয়ে দিল H মানে উচ্চতা!আমার মতো বাচ্চার জন্য এ যেন এক সাংঘাতিক কনফিউজিং অবস্থা! দ্বিতীয় ক্লাসে তো আমার অবস্থা আরো কেরোসিন, স্যার এসেই কীসব শতম,কেন্তম….শুরু করে দিয়েছেন আর এদিকে আমি বুঝিইনি যে আসলে এটা কোন সাবজেক্ট এর ক্লাস চলছে!পরে অবশ্য পাশের মহিলামিত্র টা বলে দিয়েছিল যে ওটা ছিল ব্যাকরণ ক্লাস ছিল,কিন্তু সেটা আমার মাথার উপর আর নিচ প্রবাহিত হচ্ছিল, ভিতরে একটাও ঢোকার সুযোগ পায়নি!

Share this article
0
Share
Shareable URL
Prev Post

ইতিহাসে গীত-সংগীত | লািমসা ইসলাম

Next Post

ক্ষুধার্ত হাঙর ও এটম বোমার অভিশাপ | আশির ইশরাক তাসিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next
0
Share