chaderpahar-bookreview

চাঁদের পাহাড় | বিভূতিভূষণ | বুক রিভিউ | অহর্নিশ

  • আলোচকের নামঃ অহর্নিশ রায়
  • বইয়ের নামঃ চাঁদের পাহাড়
  • বইলেখকের নামঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 
  • বইয়ের ধরনঃ রোমাঞ্চকর উপন্যাস
  • প্রচ্ছদশিল্পীর নামঃ রাজু আহম্মেদ 
  • প্রকাশকালঃ ডিসেম্বর ২০১৭
  • প্রকাশনীর নাম মৌ প্রকাশনী 
  • প্রকাশনীর ঠিকানা: ৩৯/২ পাচ ভাই ঘাট লেন ঢাকা ১১০০
  • পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৬
  • মূল্য: ১৩০
  • ISBN: 984-32-0569-7

কিছু কিছু বই আছে যেগুলো একটা নির্দিষ্ট  বয়সে না পড়লে আমাদের বাঙালী জীবন সম্পূর্ণ হয় না। যেমন ছেলেবেলায় ঠাকুরমার ঝুলি, সুকুমার রায়ের গল্প, কবিতা ঠিক তেমনি কৈশোরে চাঁদের পাহাড়।

কে না এডভেঞ্চার ভালোবাসে। আর তা যদি হয় এই চিরপরিচিত সমতল বাংলার ভূমি থেকে বহু বহু দূরে গহীন, বন্য, সভ্যতার আলোকহীন আফ্রিকায়, mountain of moon এ।

বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় আজ হতে প্রায় ৮৪ বছর আগে। গল্পটির প্লট তারো আগের৷ ১৯০৯-১৯১০ সাল। এ গল্পের নায়ক একদম অজপাড়াগাঁর ছেলে শংকর। গ্রাজুয়েট করে পাটের কল চাকরি নেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তার মনে সে বাসনা ছিল না। আমাদের মতই সে ছিল এডভেঞ্চার প্রিয়, ইচ্ছে ছিল পৃথিবী দেখার। এই ব্যাপার টাই তাকে অসাধারণ করে তুলেছে। এরপর এক আত্নীয় প্রসাদ দাসের সহযোগিতায় সে তার পরিচিত জানালার পাশের তক্তপোশ ছেড়ে গিয়ে ঠেকে একেবারে পূর্ব আফ্রিকার উগান্ডার মোম্বাসায়। রেলের কন্সট্রাকশনের চাকরি পায় সে। এর পর কিসুমু থেকে ৩০ মাইল দূরের এক স্টেশন মাস্টার। গল্পের মোড় পরিবর্তন হয় যখন তার সাথে দেখা হয় দুর্ধর্ষ পর্তুগিজ ডিয়েগো এলভারেজের। এরপর তারা দুজনে মিলে পাড়ি দেয় মধ্য আফ্রিকার রিখটারভেল্টস পর্বতমালায় হীরক খনির সন্ধানে।

কি নেই এই রোমাঞ্চকর উপন্যাসে? প্রকাণ্ড বড় বড় সিংহ, আফ্রিকার ক্রুঢ়তম সাপ ব্লাক মাম্বা, রোডেশিয়ান মন্সটার বলে খ্যাত ডিঙ্গোনেক, হীরক খনির পাহারাদার বুনিপ, সুউচ্চ পাহাড়, অভেদ্য বন্য অরণ্য, কালাহারি মরুভূমি, গাছে গাছে বেবুনের দল, বুনো হাতির ডাক, জুলু, মাসাই এর মত প্রাচীন উপজাতি, হাজার রকম জায়গার বর্ণনা।  কি নেই?

এখানে পদে পদে বিপদ, কখনো জানালার কাচে সিংহ নাক লাগিয়ে থাকে, কখনো বা তাবু ভেঙে ঢুকতে চায়, কখনো বা ব্লাক মাম্বা সাপ দু হাত দূরত্বে মাটি হতে আড়াই হাত উচ্চতায় উঠে আক্রমণে উদ্যত হয়।

এখানকার জায়গা গুলোও ভয়ংকর। কখনো বা শংকর  পথ হারিয়ে মৃত্যুমুখী হয়ে হারিয়ে যায় রোডেশিয়ান ভেল্ড এ, কখনো বা পথের বাধা হয়ে দাড়ায় বহু বছরের ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। কখনো জঙ্গলে দুই মাস ঘুরে ঘুরে একই জায়গায় ফিরে আসে অনুসন্ধানকারী। শেষ অব্দি তো কালাহারি মরুভূমি পাড়ি দিতে গিয়ে তৃষ্ণায় মরেই যেতে ধরেছিল শংকর।

তবে শেষ পর্যন্ত কি শংকর হীরকের খনি খুঁজে পায়?  জুলু ভাষায় যাকে বুনিপ বলে সেই উপদেবতা কি সত্যিই আছে?

এরকম হাজারো রকম বিস্ময় বর্ণনায় পরিপূর্ণ এই চাঁদের পাহাড় বইটি। একটি কিশোরকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য এক অতুলনীয় উপাখ্যান।

যেই বইটি পড়বে, সে বইয়ের পাতা ছেড়ে হারিয়ে যাবে গহীন আফ্রিকায়, পদে পদে লড়বে বিপদের সাথে, সিংহের সাথে করবে যুদ্ধ, মুগ্ধ চোখে আফ্রিকার পূর্ণিমা দেখবে, দেখবে বাওবাব গাছ টা যেনো সত্যিই ছাতা মেলে ধরে আছে মোহময়ী পূর্ণিমায়। রাত্রির অপার অসীম সৌন্দর্য যেন সিংহের সান্নিধ্যকেও তুচ্ছ করে, এমনি ভয়ংকর সুন্দর।

বইটির বর্ণনা অদ্ভুদ। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা মনকে ছুঁয়ে যাবে। সিংহের, সাপের বর্ণনায় ভয় দেখাবে আবার নির্জন রাতের অপরিমিত পূর্ণিমার শোভা বর্ণনায় মনকে উদাস করে তুলবে।  বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এত নিখুঁত ভাবে বর্ণনা করেছেন সবকিছু যেন একটা সিনেমা দেখছি।  চোখ শব্দ দেখবে, আর মন তার চিত্র ফুটিয়ে নিয়ে চলবে ভয়ানক রোমাঞ্চকর অভিযানে। তবে সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বইয়ের পাতায় পাতায় ঘরের কোণ ছেড়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন সূদুর আফ্রিকায় , তিনি কখনো নিজেই ভারতবর্ষের বাইরে পা রাখেন নি। কত সুচারো, নিখুঁত, শক্তিশালী তাঁর কলম, তাঁর কল্পনা।

আর একটা ব্যাপার এখানে বলতে চাই, ভূমিকায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, চাঁদের পাহাড় কোনো ইংরেজি উপন্যাসের অনুবাদ নয়, বা তার ছায়া অবলম্বনে রচিত নয়। তবে প্রাকৃতিক দৃশ্যকে বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য তিনি অনেক ভ্রমণকারীর বইয়ের সাহায্য নিয়েছেন৷ তবে রিখটারসভেল্ড পর্বত মধ্য আফ্রিকার প্রসিদ্ধ পর্বতশ্রেণী এবং বুনিপ এবং ডিঙ্গোনেকের প্রবাদ জুলু ল্যান্ডের বহু আরণ্য অঞ্চলে এখনো প্রচলিত।

সর্বোপরি, চাঁদের পাহাড় বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য এডভেঞ্চার কাহিনী। এক অমর সৃষ্টি। এটি বাঙালীর রোমাঞ্চকর এডভেঞ্চারপ্রিয়তার প্রতীক৷ এই বইটি যুগ যুগ ধরে বাঙালী কিশোর যুবক কে সাহসী, এডভেঞ্চারপ্রিয় করে তুলেছে। নতুন কে দেখার, দুর্জয় কে জয় করার, বিশ্বকে নিজের করে নেওয়ার অদম্য সাহস যুগিয়েছে৷ প্রতিটি কিশোরকে স্বপ্ন দেখিয়েছে৷ প্রকৃতির অজানা হাজারো রহস্যের সমাধানে হৃদয়কে উদ্বুদ্ধ করেছে। আরো যুগ যুগ ধরে করবে৷

10/10
Total Score
  • ব্যক্তিগত রেটিং
    10/10 The best

ভালো লেগেছে

  • বর্ণনা
  • অসাধারণ গল্প

ভালো লাগেনি

  • নেই
Share this article
0
Share
Shareable URL
Prev Post

আত্মচিৎকার | তানজিলা তিথি

Next Post

একটু উষ্ণতার জন‍্য | বুদ্ধদেব গুহ | বুক রিভিউ | ইয়াসমিনা পারভীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next
0
Share